জামের বিচি গুড়া ও জাম গাছের বিভিন্ন অংশের ঔষধিগুণ
জামের বিচি গুড়া শর্করাযুক্ত বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। পাকস্থলী, প্লীহা ও যকৃতের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্ত ও পিত্তের প্রকোপ প্রশমিত করে। উদরাময়, আমাশয়, অর্শ, বমি ও বমিভাব নির্বারণ করে। এছাড়া হজমকারক, দাঁতের গোড়া ও মাড়ির শক্তি বৃদ্ধি করে।
জামের পুষ্টিগুণ
জাম আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। এটি শুধু আমাদের রসনাতৃপ্তিই মেটায় না; এর মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ। ইউরোপে বহু পূর্ব থেকেই জামের বীজ ব্যবহৃত হয়। এ নিয়ে হয়েছে অনেক গবেষণা। আমাদের এ দেশী ফল জামে রয়েছে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান।জামে আছেশর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন–এ, বি, সি, লৌহ, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
জামের রাসায়নিক উপাদানআধুনিক গবেষণায় এর আলফা ও বিটা পাইনাইন।ছালে–কেইমফেরন, বিটা–সাইটোস্টেরল, পাতায়–সাইটোস্টেরল এসিড, ফুলে–ওলিয়ানলিক এসিড, ক্রাটিগোলিক এসিড, ফলে–ক্রাটিগোলিক এসিড, ফলে–সাইট্রিক, মেলিক এবং গ্যালিক এসিড, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বো হাইড্রেট, ভিটামিন–এ, সি, থায়ামিন, রিবোফ্লামিন, নিকোটিনিক এসিড, ফলিক এসিড, খনিজ পদার্থ রয়েছে।
জামের বীজে বিটা সাইটোস্টেরল, এসেনসিয়াল ওয়েল, টেনিনস, গ্লাইকোসাইড, জামবোলিন, ফ্লাভোনয়েডস, ফিলোনিক, গ্যালিক, এলাজিক, ক্যাজিক, ফিরুলিক এবং হেক্সাহাইড্রাইফেনিক এসিড রয়েছে।জাম কার্ডিয়াক ভাসকুলার সিস্টেমকে একটিভ করে। এর পাতায় এন্টিব্যাকটিরিয়াল এবং বীজে হাইপোগ্লাইসোমিক গুণাগুণ বিদ্যমান রয়েছে।
ডায়াবেটিস রোগ
রোগপ্রতিকারে জাম ডায়াবেটিসে ডায়াবেটিস রোগী, যাদের হাইব্লাডপ্রেসার নাই এক্ষেত্রে ১ চা–চামচ পরিমাণ সদ্য সংগ্রহকৃত জামের বিচি গুড়া সকাল–সন্ধ্যায় সেবন করলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রক্ত আমাশয়ে
জামের পাতার রস ৩ চা–চামচ পরিমাণ তাতে সমপরিমাণ ছাগীর দুধ মিশিয়ে সকাল–সন্ধ্যায় খালি পেটে সেবন করালে ৫–৭ দিনের মধ্যে রক্ত আমাশয় বন্ধ হয়ে যায়।
রক্তাতি সারে
জামের কচি পাতার রস ৩ চা–চামচ, আমলকীর কচি পাতার রস ৩ চা–চামচ, ছাগীর দুধ ৩ চা–চামচ এবং মধু ২ চা–চামচ একত্রে মিশ্রিত করে সকাল–সন্ধ্যায় খালি পেটে সেবন করলে ১–২ দিনের মধ্যেই উপকার দর্শে।
বমনে
পিত্ত–বিকৃতজনিত কারণে যখন বমি হতে থাকে, সে সময় ২–১ টি কচি জাম পাতা কুচি কুচি করে ১ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে অর্ধেক করে তাতে ১ চা–চামচ মধু মিশিয়ে সেবন করালে বমি বন্ধ হয় এবং বমি বমি ভাব দূর হয়।
শুক্রতারল্যে
জামের পুরোনো আঁটি এবং আমের পুরোনো আঁটির শাঁস সমান পরিমাণ নিয়ে চূর্ণ করে সংরক্ষণ করুন। এই চূর্ণ মিহিনগুঁড়ো করতে হবে। ঐ চূর্ণ সকালে ২ চা–চামচ এবং সন্ধ্যায় ২ চা–চামচ নিয়মিত ১৫ দিন সেবন করলেই বীর্য গাঢ় হয় এবং রতিশক্তি বেড়ে যায়।
দাঁত নড়া ও মাড়ির দুর্বলতায়
জামের ছাল দাঁত নড়া এবং মাড়ির দুর্বলতায় পরিমাণমত নিয়ে ৩ গুণ পানিতে ভিজিয়ে সিদ্ধ করে অর্ধেক হলে ঐ পানির দ্বারা গড়গড়া করলে ৫–৭ দিনেই উপকার পাওয়া যায়।
দাঁতের গোড়া নরম হলে
জামের পাতা শুকিয়ে মিহিন গুঁড়ো করে সেই গুঁড়ো দিয়ে সকাল–বিকাল দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়।
পোড়া স্থানের সাদা দাগ সারাতে
জামের পাতা আগুনে পুড়ে কোন স্থান সাদা হয়ে থাকলে এক্ষেত্রে পিষে আগুনের পোড়া সাদা স্থানে প্রলেপ দিলে ঐ স্থান গায়ের স্বাভাবিক রঙের সাথে মিশে যায়। কিছুদিন ব্যবহার করলে সাদা চিহ্ন আর থাকে না, সেরে যায়।
রক্তরোধে
জাম পাতা হাত–পা কেটে বা ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না এমন অবস্থায় ধুয়ে পরিষ্কার করে রস বের করে কাটা স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
দুষ্টক্ষতে
শরীরের কোন স্থানে ক্ষত হয়ে গর্ত হলে এবং ঐ ক্ষতস্থানের ঘা সহজে শুকাচ্ছে না এমন অবস্থায় জামের ছাল চূর্ণ করে মিহিন চালনীতে চেলে ঐ গুঁড়ো ক্ষতস্থানে ছিটিয়ে দিতে হবে দিনে ২ বার। এভাবে ৫–৭ দিন লাগালেই উপকার পাওয়া যায়।
যকৃতের দুর্বলতায়
যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়াতে জামের সির্কা ৩ চা–চামচ পরিমাণ প্রতিদিন ৩ বেলা আহারের পর পর ১৫ দিন সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।
পাকস্থলীর দুর্বলতায়
পাকস্থলীর দুর্বলতার কারণে যাদের খাবার ঠিকমত হজম হচ্ছে না, এক্ষেত্রে ১টি পিঁয়াজ কুচি এবং অর্ধেক আদা কুচি আধা কাপ জামের সির্কায় আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে দুপুরে এবং রাতে আহারের মাঝে খেলে খাবার ভালভাবে হজম হয়।
প্রসাবের সাথে যাদের ধাতু নির্গত হয় এক্ষেত্রে জামের ২৪ গ্রাম ফুল, ২৫০ মিলিলিটার পানিতে ভিজিয়ে পিষে বা বেটে নিতে হবে। এরপর মিহিন কাপড়ে ছেঁকে তাতে দ্বিগুণ মিছরী মিশিয়ে শরবত তৈরি করে বোতলে সংরক্ষণ করুন। এই সরবত প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ চা–চামচ পরিমাণ খালি পেটে সেবন করলে মেহ রোগে আরাম পাওয়া যায়।
মাথার ঘায়ে
মাথায় ঘা হয়ে যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে এমন অবস্থায় পাকা জামের বিচি ছাড়িয়ে রস ও মজ্জা দিয়ে মাথায় লেপ দিলে ১০–১৫ দিনের মধ্যেই ঘা শুকিয়ে যায় এবং মাথায় নতুন চুল গজায়।
হাত–পা জ্বালায়
গ্রীষ্মের দাবদাহে হাত–পা জ্বালা পোড়া করলে পাকা–পোক্ত জাম–এর রস হাতে পায়ে মাখলে তৎক্ষণাৎ জ্বালা–পোড়া বন্ধ হয়।
অরুচিতে
পাকা জাম, বিট লবণ, কাঁচা মরিচ কুচি একত্রে মিশিয়ে ভর্তা বানিয়ে খেলে আহারের রুচি ফিরে আসে।
সাবধানতা
শীতল প্রকৃতির মানুষ যারা অর্থাৎ অল্প ঠান্ডা বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথেই সর্দি–কাশিতে ভুগতে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ অর্থাৎ অতিরিক্ত মাত্রায় জাম না খাওয়াই উত্তম। তবে, অল্প পরিমাণ নিয়ম মেনে খেলে অসুবিধা নেই।
Reviews
There are no reviews yet.